প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: যে কোনাে জাতির জীবনে স্বাধীনতা সূর্যকে ছিনিয়ে আনা কষ্টকর এবং তার চেয়েও কষ্টকর ঐ স্বাধীনতারক্ষা করা।
সম্প্রসারিত ভাব : স্বাধীনতা মানুষের অমূল্য সম্পদ। কোনাে মানুষই পরাধীনরূপে বেঁচে থাকতে চায় না। স্বাধীনতাঅর্জন অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার। তাই মানুষ স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে, যুদ্ধ করে। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অবর্ণনীয়দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয় এবং অমূল্য জীবন বিসর্জনের মাধ্যমেই স্বাধীনতা আসতে পারে। কারণ স্বার্থমগ্ন।শক্তিশালী বেনিয়া শাসকেরা সহজে কোনাে জাতিকে স্বাধীনতা দিতে চায় না; বহু কষ্টে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমেই তাছিনিয়ে আনতে হয়। স্বাধীনতা অর্জিত হলেই সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় না; তখন বিজয়ী জাতির সামনে আসে স্বাধীনতা রক্ষারসংগ্রাম। এ সংগ্রামে আরাে বেশি ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শক্তি-সামর্থ্যের প্রয়ােজন হয়। কারণ স্বাধীন দেশের ভেতরে ও বাইরেশত্রুর অভাব নেই। এরা সুযােগের সন্ধানে তৎপর থাকে সারাক্ষণ। যে কোনাে সময় সুযােগ পেলে হিংসাত্মক কার্যকলাপের।মাধ্যমে স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে তুলতে পারে। সুতরাং, এ ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল, মীরজাফরি চরিত্রের হিংসাত্মক দৃষ্টিথেকে দেশকে রক্ষার জন্য শক্তি ও বুদ্ধি প্রয়ােজন। যদিও তাদের পরাভূত করা কঠিন ব্যাপার। যথেষ্ট দায়িত্ব সচেতন, সদাসতর্ক, নিবেদিত প্রাণ, দেশপ্রেমিক ও শক্তিশালী না হলে স্বাধীনতাকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
মন্তব্য : স্বাধীনতা রক্ষা করা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে কঠিন ও দুরূহ কাজ। তাই স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য সবাইকেপ্রাণপণ চেষ্টা করা উচিত।
বিকল্প ১
মূলভাব: পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে স্বাধীনতা অর্জন করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। কিন্তু অর্জিত স্বাধীনতাকে যথার্থভাবে রক্ষা করতে আরও অনেক বেশি ত্যাগ, সাধনা, পরিশ্রম ও নিষ্ঠার প্রয়ােজন হয়। সর্বোপরি প্রয়ােজন দেশের জনগণের পারস্পরিক ঐক্য ও দেশপ্রেম।
ভাবসম্প্রসারণ: স্বাধীনতা সকলেরই কাম্য। স্বাধীনতা কথাটি যতই মধুর হােক না কেন, সহজ পথে তা লাভ করা যায় না। অনেক ত্যাগ, রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়। পৃথিবীতে কোনাে জাতিই বিনা কষ্টে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি।কেবল স্বাধীনতা অর্জনই শেষ কথা নয়, বহু কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আরও কঠিন। কারণ স্বাধীনতার শত্রুরা কখনােই অর্জিত স্বাধীনতার স্বাদ নির্বিঘ্নে ভােগ করতে দেয় না। স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বাধীনতার বিপক্ষের শত্রুরা স্বাধীনতাকে বিনষ্ট করার জন্যে তৎপর হয়ে ওঠে। এ ধরনের শত্রু দেশের ভেতর ও বাইরে বিরাজমান থাকে। ভেতরের শত্রু যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, আবার বাইরের শত্রু যাতে তাদের সাথে হাত মিলাতে না পারে সেদিকে সকলেরই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অপরদিকে বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করা ও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা, অর্থনৈতিক উন্নতি করা খুবই কষ্টকর। সে কারণে কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে দেশের নারী-পুরুষ সকলেরই মাঠে, কলকারখানায়, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষ্টি ইত্যাদি দেশ গঠনমূলক কাজে আন্তরিকতার সাথে নিজেকে নিয়ােজিত করতে হবে। দেশের সকল নাগরিক যদি একতাবদ্ধভাবে দেশের অগ্রগতির জন্যে কাজ করে তবে স্বাধীনতা বিপন্ন হওয়ার ভয় থাকে না। স্বাধীনতা লাভের পর যদি দেশ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল থাকে, দেশের জনগণ সচেতন না হয়, যদি জনগণ দেশপ্রেমিক না হয় তবেই স্বাধীনতা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একতাবদ্ধ নাগরিক দেশের যেকোনাে বিপদ মােকাবিলা করতে পারে দৃঢ়ভাবে। প্রয়ােজনে রক্ত ও জীবন বিসর্জন দিতে এরা দ্বিধা করে না।
স্বাধীনতা লাভ করলেই কর্তব্য শেষ হয় না, একে মর্যাদার সাথে রক্ষা করে পূর্ণতা দিতে পারলেই অর্থবহ হবে। স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে সকলকেই পরিশ্রমী, দায়িত্বশীল, কর্তব্যপরায়ণ ও দেশপ্রেমিক হতে হবে।
বিকল্প ২
মূলভাব: পরাধীন জাতির পক্ষে স্বাধীনতা অর্জন অত্যন্ত কঠিন কাজ । স্বাধীনতা অর্জিত হলেই তা চিরস্থায়ী হয় না। অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আরো কঠিন কাজ। তাই স্বাধীনতা রক্ষায় জাতিকে থাকতে হবে সদাজাগ্রত।
সম্প্রসারিত ভাব: স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। আর মানুষ মাত্রই স্বাধীনতাপ্রিয় । তার জীবনের প্রধান আকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতা। স্বাধীনতা কথাটি যতই মধুর হোক না কেন এটা অর্জন করা বড়ই কঠিন । এটাকে পাওয়ার জন্যেই মানুষ যুগ যুগ ধরে সংগ্রাম করে আসছে। নিপীড়িত, অত্যাচারিত জাতি স্বীয় মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যে সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্তিলাভ করে থাকে। কিন্তু এ মুক্তি অর্জনই মুখ্য উদ্দেশ্য নয় । একে সমুন্নত রাখাই মুখ্য উদ্দেশ্য। স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে একে রক্ষা করার জন্যে সদাপ্রস্তুত থাকা একান্ত প্রয়োজন । স্বাধীনতা লাভের পর পরাধীনের মতো জীবনযাপন না করে বলিষ্ঠ ও আত্মপ্রত্যয়ী জাতি হিসেবে স্বাধীনতাকে অম্লান রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। তবেই অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব। অপরপক্ষে, স্বাধীনতা লাভ করেই কোনো জাতি যদি আত্মতুষ্টি অনুভব করতে শুরু করে, জাতি গঠনে সর্বস্ব নিয়োগ না করে স্বার্থপরতায় মগ্ন থাকে, অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন না থাকে তবে অর্জিত ঈপ্সিত স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়বে। তাই স্বাধীনতা পরবর্তী মানুষের যাবতীয় কার্যকলাপের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত স্বাধীনতাপূর্ণ গৌরবোজ্জ্বল জীবনের বিকাশ, অর্জিত স্বাধীনতা সুরক্ষা করেই তা করতে হবে।
মন্তব্য: একটি জাতিকে কঠিন ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম, অবিচল সাধনার মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্যকে অর্জন করতে হয়। তাই স্বাধীনতার ব্যাপকতা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে একে রক্ষা করা সকলের জাতীয় কর্তব্য।
বিকল্প ৩
ভাব-সম্প্রসারণ : স্বাধীনতা একটি জাতির অমূল্য সম্পদ। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা যেকোনাে জাতির জন্য গর্ব এবং এমন অনুপ্রেরণার বিষয়। অনেক সাধনা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, এমনকি রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। অর্জিত স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য প্রয়ােজন যেমন নিরলস শ্রম-সাধনা তেমনি প্রয়ােজন যােগ্য নেতৃত্ব। সুতরাং স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা রক্ষা করার প্রয়ােজনে আরও কঠিনতম সাধনা অপরিহার্য।
মানুষমাত্রই স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে চায়। তাই স্বাধীনতা সকলেরই একটি আরাধ্য বিষয়। এ প্রসঙ্গে কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিমােক্ত চরণটি উল্লেখযােগ্য :
স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায়?
কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন করা একটি দুঃসাধ্য কাজ। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে নিপীড়িত, অত্যাচারিত জাতিকে মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে হয়। কিন্তু এ অর্জনই শেষ কথা নয়। বরং প্রয়ােজন স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌছে দেওয়া। এজন্য আপামর জনসাধারণের ঐক্য একান্তভাবে দরকার। প্রয়ােজন হয়ে দাঁড়ায় সময়ােপযােগী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব । অতি জরুরি হয়ে পড়ে আর্থনীতিক স্বনির্ভরতা এবং সাংস্কৃতিক ঐক্য। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য তা বরাবরই কঠিন। বরং এরূপ প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবে পরাজিত শক্তি সুযােগের আশায় থাকে শেষ ছােবলের জন্য। আর তাদের দোসররা নানা দুর্বলতার সুযােগ খুঁজতে সদা সচেষ্ট থাকে। বিশ্বেও এ সময় নানা রাজনীতিক চক্রান্তের সৃষ্টি হয়, অসংখ্য সমস্যা জন্ম নেয় । প্রতিবেশী রাষ্ট্র সহায়তা করলেও তাতে অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থ নিহিত থাকে। এরূপ ক্রান্তিকালে অভ্যন্তরীণ বিবাদবিশঙ্খলা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। স্বাধীনতা অর্জনকারীদের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি জন্ম দেয় এক প্রতিকূল পরিবেশ। এছাড়া পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনীতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনীতিক অস্থিরতায় উপযুক্ত নেতৃত্বের সংকট ঘটতে পারে। ফলে গণমানুষের চাওয়া-পাওয়া চরমভাবে উপেক্ষিত হয়। রাষ্ট্রীয় জীবনে দেখা দেয় ব্যাপক হতাশা, অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতাসহ নানাবিধ সমস্যা। সর্বোপরি জাতীয় ঐক্যে চিড় ধরে। জাতীয় উন্নতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এমনকি দেশের অর্থনীতির ওপর আঘাত আসে, উৎপাদন কমে যায়। ফলে জন্ম নিতে পারে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের। সুতরাং এরূপ প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার মর্যাদা গুরুত রক্ষার প্রশ্ন বড়াে হয়ে ওঠে। তাই স্বাধীনতা রক্ষায় প্রয়ােজনে সর্বস্তরের জনগণকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে মাঠে-ঘাটে ময়দানে কল-কারখানায় সর্বত্রই। কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক শ্রম দিয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। শিল্পে, বাণিজ্যে দেশকে উন্নত করতে হবে। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এভাবেই আরাধ্য স্বাধীনতাকে ব্যর্থতার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতির ঐক্যবদ্ধ ভূমিকাই প্রধান।
অনেক কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব সকলের । সতরা এই যেকোনাে ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। তবেই স্বাধীনতা চির-অম্লান হয়ে থাকবে।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।