প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “দুঃখেৱ মত এত বড় পরশ পাথর আৱ নেই ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
দুঃখেৱ মত এত বড় পরশ পাথর আৱ নেই ভাবসম্প্রসারণ
এ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের জীবনে রয়েছে সুখ-দুঃখের সহাবস্থান। একটিকে ছাড়া অন্যটিকে মানুষ সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। দুঃখের সংস্পর্শে না এলে মানুষের স্বীয় সত্তা ও অন্তরশক্তি সঠিকভাবে জাগ্রত হয় না। দুঃখের পরশেই মানুষের বিবেক জাগ্রত হয়, মানুষের জীবন হয় মানবিক বােধে আলােকিত, মানুষ হয়ে ওঠে মহানুভব, মহীয়ান। দুঃখই মানুষের সকল দৈন্য দূর করে তাকে খাটি মানুষে পরিণত করে। সুখবিলাসী মানুষ জীবনকে পুরােপুরি উপলব্ধি করতে পারে না। দুঃখে পড়লে মানুষ সুখের যথার্থ মর্ম বুঝতে পারে, জীবনের প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে। দুঃখের দারুণ দহন শেষে মানুষের জীবনে যে সুখ আসে তা অনাবিল ও অতুলনীয়। দুঃখই পারে মানুষের অন্তর্নিহিত মনুষ্যত্ব ও বিবেককে জাগ্রত করতে, মানুষকে খাটি মানুষে পরিণত করতে। দুঃখ মােকাবিলা করার শক্তি দিয়েই মানুষ আপন শক্তির পরিচয় দিতে পারে। পৃথিবীতে মহৎ কিছু অর্জন করতে হলে মানুষকে কষ্ট সইতে হয়। প্রবাদ আছে, কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না। তাই পৃথিবীতে মহামনীষীরা দুঃখকে তুলনা করেছেন পরশপাথরের সঙ্গে। পরশপাথরের ছোয়ায় লােহা যেমন স্বর্ণপিণ্ডে রূপান্তরিত হয়, দুঃখও তেমনি মানুষের জীবনকে নতুন রূপ দেয় ক্লেদ ও গ্লানি থেকে মুক্ত ও নির্মল করে। দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগ-তিতিক্ষা ছাড়া জীবনের স্বর্ণশিখরে আরােহণ অসম্ভব। পৃথিবীর বিখ্যাত মনীষীগণ স্বীয় সাধনার পথে দুঃখকে অন্তর দিয়ে অনুভব করেছিলেন, দুঃখকে বরণ করে নিয়েছিলেন বলেই আজও তাঁরা স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স), যীশু খ্রিস্ট, গৌতম বুদ্ধ প্রমুখ মহান ধর্মবেত্তা দুঃখকে জয় করে খাটি মানুষে পরিণত হয়েছিলেন, কাজ করেছিলেন সমগ্র মানব জাতির কল্যাণের জন্য। বস্তুত মানুষের মনুষ্যত্ব ও অন্তর্নিহিত গুণাবলীর বিকাশের জন্য দুঃখ মানুষের জীবনে পরশপাথরের মতােই কাজ করে।
বিকল্প ১
মূলভাব : পরশ পাথরের স্পর্শে লােহা যেমন খাঁটি সােনায় পরিণত হয়, তেমনি দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে মানবজীবন সার্থক হয়ে ওঠে।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ পাশাপাশি অবস্থান করে। একটির পর অপরটি আসে পর্যায়ক্রমে। তন্মধ্যে সুখের সময় মানুষ ভােগ-বিলাসে জীবন ভাসিয়ে দিলে আনন্দ পাওয়া যায় সত্য, কিন্তু তাতে জীবনের প্রকৃত স্বরূপ জানা যায় না। দুঃখে পড়ে মানুষ নিজেকে চেনে। নিজের শক্তি-সামর্থ ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দুঃখের মধ্য দিয়েই উপলব্ধি করা যায়। দুঃখের পরশেই মানুষের জীবন হয় মানবিকবােধে আলােকিত, মানুষ হয়ে ওঠে মহানুভব, মহীয়ান। তাই মানব চরিত্রের পূর্ণ বিকাশের জন্য দুঃখকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগ-তিতিক্ষা ব্যতীত ব্যক্তি জীবন কিবা জাতীয় জীবনে সফলতা আসতে পারে না। দুঃখের আবেদন চিরন্তন। ইংরেজ কবি জন কিটস্ বলেছেন, “Sorrow is knowledge” –দুঃখবােধই প্রজ্ঞার উৎস। দুঃখবােধ মানুষকে স্রষ্টাভিমুখী করে। দুঃখের অনলে পুড়েমনুষ্যত্ব-বিবেক খাঁটি স্বর্ণে পরিণত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায়-“দুঃখই জগতে একমাত্র সকল পদার্থের মূল্য।”মাতৃস্নেহের মূল্য দুঃখে, পব্ৰিত্যের মূল্য দুঃখে, বীর্যের মূল্য দুঃখে, পুণ্যের মূল্য দুঃখে। তাই মহামানবগণ দুঃখকে পরশপাথররূপে বর্ণনা করেছেন। পরশ পাথরের সংস্পর্শে লােহা যেমন সােনা হয়, তেমনি দুঃখরূপ পরশ পাথরের স্পর্শে মানুষের সবমালিন্য নিঃশেষ হয়ে জীবন সার্থকতার মহিমায় প্রােজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে।
মন্তব্য : জগতের সব সাফল্যের সাথে জড়িত আছে সীমাহীন দুঃখ-কষ্টের ইতিহাস। তাই কবির কথায় বলা যায়—ধন কহে, “দুঃখ তুমি পরম মঞ্জাল,তােমারি দহনে আমি হয়েছি উজ্জ্বল।”
বিকল্প ২
মূলভাব: দুঃখের স্পর্শে মানুষের মানবীয়সত্তা ও অন্তর্গত শক্তি জাগ্রত হয়। দুঃখের মধ্য দিয়েই মানুষ সত্যিকার মনুষ্যত্ব লাভ করে। দুঃখের পরশেই মানুষের বিবেক পরিশুদ্ধ হয়।
ভাবসম্প্রসারণ: দুঃখবােধ থেকেই প্রজ্ঞা বা জ্ঞানের উন্মেষ ঘটে। দুঃখের করুণ দহন শেষে যে সুখ আবির্ভূত হয়, তা অনাবিল ও অতুলনীয়। দুঃখের আগুনই মানুষের মনুষ্যত্ব ও বিবেককে খাঁটি সােনায় পরিণত করে। পৃথিবীর সব মূল্যবান সম্পদ কষ্টের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে। দুঃখ ছাড়া প্রকৃত সুখ অর্জন সম্ভব নয়। মনীষীগণ দুঃখকে পরশ পাথরের সঙ্গে তুলনা করেছেন।পরশ পাথরের ছোয়ায় লােহা যেমন সােনায় পরিণত হয়, তেমনই দুঃখরূপ। পরশ পাথরের ছোঁয়ায় মানুষের সব গ্লানি দূর হয়ে যায়। ফলে মানুষ লাভ করে জীবনের সার্থকতা। জগতের সব সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সীমাহীন দুঃখের মর্মান্তিক ইতিহাস। দুঃখ, কষ্ট, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অধ্যবসায় ছাড়া জীবনে প্রার্থিত স্বর্ণশিখরে আরােহণ অসম্ভব। সুতরাং জীবনে চলার পথে দুঃখকে সাথে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
দুঃখ মানুষের সকল জড়তা ও দীনতা দূর করে তাকে সুন্দর করে দুঃখের ভেতর দিয়েই মানুষ জীবন সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে সুতরাং জাগতিক সকল প্রাপ্তির পূর্বশর্ত দুঃখের পরশ।
বিকল্প ৩
মূলভাব: প্রচলিত একটি কথা আছে- পরশপাথরের ছোঁয়ায় লােহাও সােনায় পরিণত হয়। তেমনই মানবজীবনে কোনাে কোনাে দুঃখময় ঘটনা ক্ষুদ্র মানুষকে মহৎ মানুষে পরিণত করে। একজন মানুষ তার দুঃখময় সময় থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে, যা তার জীবনকে এগিয়ে নিতে নানাভাবে সাহায্য করে।
সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের জীবনে সুখ ও দুঃখ নামক দুটি জিনিসের অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। সুখ-দুঃখ পর্যায়ক্রমে আসে। তাই জীবনে দুঃখ এলে ভেঙে পড়লে চলবে না। আর সুখ এলেও তা নিয়ে অতি গর্ব করারও কিছু নেই। আগুনে পােড়ালে যেমন খাঁটি সােনার পরিচয় স্পষ্ট হয়, তেমনই দুঃখের দহন মানুষকে খাটি মানুষে পরিণত করে। আঘাতে আঘাতে, বেদনায় বেদনায় মানুষের মনুষ্যত্ববােধ, সত্যনিষ্ঠা ও বিবেকবােধ জাগ্রত হয়। দুঃখে না পড়লে কোনাে মানুষই জীবনের যথার্থ স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে না। মনীষীগণ তাই দুঃখকে পরশপাথরের সাথে তুলনা করেছেন।
পরশপাথরের ছোঁয়ায় যেমন লােহা সােনায় পরিণত হয়, তেমনই দুঃখের আঘাত অমানুষকে মহৎ মানুষে পরিণত করতে পারে। বেদনার অশ্রুতে যখন ভেসে যায় সমস্ত গ্লানি, তখন অপার্থিব এক পবিত্ৰবােধ জন্ম নেয় হৃদয়ে। সেই পবিত্ৰবােধই তাকে সুন্দর করে, নতুন এক মানুষে পরিণত করে। পৃথিবীর ইতিহাসে মনীষীদের জীবনীতে আমরা দেখি যে, তারা দুঃখময় জীবন কাটিয়েই সুখের সন্ধান পেয়েছেন। দুঃখকে সাদরে গ্রহণ করে নেওয়ার ফলেই তারা সুখের দেখা পেয়েছেন। দুঃখকে কখনাে তারা অবজ্ঞা করেননি।
মন্তব্য: মানুষের জীবনে জরা, ব্যাধির মতাে সুখ-দুঃখও নিয়মিত ব্যাপার। এ দুটি বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়ার কোনাে পথ নেই। তবে বাস্তব জীবনে এমন অনেক বিষাদময় ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, যা সাধারণ মানুষকে মহৎ হৃদয়ের মানুষে পরিণত করে। স্রষ্টার পক্ষ থেকে দুঃখও এক ধরনের পরীক্ষা। দুঃখের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে সাধারণ মানুষ উত্তম মানুষে পরিণত হয়।
আরো পড়ুন: ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ/মনুষ্যত্বের বিকাশ
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।