‘একা’ প্রবন্ধের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র একাকীত্বজনিত যে গভীর হৃদয়যন্ত্রণা ব্যক্ত করেছেন, তার পরিচয় দাও

আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে “‘একা’ প্রবন্ধের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র একাকীত্বজনিত যে গভীর হৃদয়যন্ত্রণা ব্যক্ত করেছেন, তার পরিচয় দাও” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।

‘একা’ প্রবন্ধের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র একাকীত্বজনিত যে গভীর হৃদয়যন্ত্রণা ব্যক্ত করেছেন, তার পরিচয় দাও

‘একা’ প্রবন্ধের মধ্যে কমলাকান্তের বক্তব্যে একাকীত্বের যে গভীর যন্ত্রণা প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে দিয়ে লোক বঙ্কিমচন্দ্রেরও ব্যক্তিগত জীবনযন্ত্রণার কিছু পরিচয় পরিলক্ষিত করেছে। তিনি সরকারি চাকুরিতে প্রচুর মানসম্মান লাভ করেছিলেন, অন্যদিকে সাহিত্য জীবনেও প্রভুত খ্যাতি লাভ করেছিলেন, কিন্তু এত মানসম্মান খ্যাতির মধ্যেও বঙ্কিমচন্দ্র গভীর এককীত্বের বেদনায় জর্জরিত হয়েছেন। তিনি নব্য শিক্ষিত ও প্রাচীনপন্থী উভয় শ্রেণির বাঙালির চিন্তার জগতে বারবার আঘাত করেছেন, কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি তাঁর উপন্যাস প্রবন্ধ ও অন্যান্য রচনার মধ্যে যে বক্তব্য রাখতে চেয়েছেন, সাধারণ বাঙালি তা বুঝতে পারেনি। বঙ্কিমচন্দ্র নিজের মনের দোসর খুঁজে পাননি। এইভাবেই তিনি চিন্তার জগতে ও আদর্শের ক্ষেত্রে ‘একা’ রেখে গেছেন। এই একাকীত্বের বেদনাই ব্যক্ত হয়েছে কমলাকান্তের জবানিতে।

কমলাকান্ত কোনো এক জ্যোৎস্নালোকিত রজনিতে পথ দিয়ে চলে যাওয়া এক পথিকের মুখে একটি পুরাতন গীত শুনতে পেয়ে আনন্দে অধীর হয়ে উঠলেন। তাঁর মনে জেগে উঠল পুরানো সুখস্মৃতি । রাজপথ দিয়ে অসংখ্য নরনারী হেঁটে যাচ্ছে। জ্যোৎস্নালোকে তাদের কণ্ঠে জেগে উঠেছে আনন্দোল্লাস, তাদের হাসি ও গল্পে আনন্দ ঝরে পড়ছে। এইসময়ে কমলাকান্ত একাকী ঘরের মধ্যে বন্ধ। তাঁর মনে কোনো আনন্দ নেই। তিনি একা তাঁর কোনো ভালোবাসার লোক নেই, এই কারণে তিনি বাইরের এই আনন্দময় জগতের অংশীদারী হতে পারছেন না। কমলাকান্ত বুঝতে পেরেছেন, সংসারে একাকীত্ব বড়ো যন্ত্রণাদায়ক। একা থাকার মতো কষ্ট আর নাই। তাই তার নির্দেশ এই সংসারে কেউ যেন একা না থাকে। এ সংসারে কেউ যদি প্রণয়ভাগী না হয় তবে তাঁর মানুষের জন্মই ব্যর্থ।

এরপর কমলাকান্ত তাঁর নিরানন্দের উৎস সন্ধান করেছেন। তিনি দেখেছেন মনুষ্য আগেও যে রকম উপকরণ ছিল, এখনও সেসব আছে। তথাপি মনের মধ্যে আনন্দের অভাব। এর কারণ হল, যৌবনে মানুষের মনে যে আশা থাকে পরিণত বয়সে সেই আশা পূরণ করা যায় না। আশাই মানুষের জীবনকে আনন্দময় করে তোলে। এখন জীবনে আশা নেই বলে মনের মধ্যে আর আনন্দ জাগে না। জীবনের অভিজ্ঞতায় কমলাকান্ত জেনেছেন। অতীত যাকে সুন্দর বলে মনে করতেন, তা আসলে অসুন্দর। এখন জানিয়েছে যে এ অরণ্যে পথ নাই, “এ প্রান্তরে জলাশয় নাই, এ নদীর পার নাই এ জগতে দ্বীপ নাই এ অন্ধকারের নক্ষত্র নাই।”

কমলাকান্ত জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় জেনেছেন বা ফুলের মধ্যে কীট আছে, যেমন পল্লবে কণ্টক আছে, আকাশে মেঘ আছে, নির্মল নদীতে আবর্ত আছে, ফলে বিষ আছে, উদ্যানে সৰ্প আছে, মনুষ্য হৃদয়ে আত্মা আছে।

আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।

Leave a Comment