কত বড় আমি কহে নকল হীরাটি তাইতাে সন্দেহ করি নহ ঠিক খাঁটি – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “কত বড় আমি কহে নকল হীরাটি তাইতাে সন্দেহ করি নহ ঠিক খাঁটি ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

কত বড় আমি কহে নকল হীরাটি তাইতাে সন্দেহ করি নহ ঠিক খাঁটি - ভাবসম্প্রসারণ

কত বড় আমি কহে নকল হীরাটি তাইতাে সন্দেহ করি নহ ঠিক খাঁটি ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : পৃথিবীর জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিগণ তাদের গৌরবােজ্জ্বল কীর্তির ব্যাপ্তি প্রচার করে বেড়ায় না। গুণহীনরাই নিজেদের বড় বলে ঢাকঢােল পিটিয়ে বেড়ায়।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায় তার কর্মে, প্রচারে নয়। মহৎ ব্যক্তিদের কর্মের জয়গান করে অন্যরা,নিজেরা নয়। যে নিজেকে বড় মনে করে এবং গৌরব বৃদ্ধির জন্য নিজের গুণকীর্তন করে বেড়ায় সে প্রকৃতই গুণহীন। অন্তঃসার শূন্য মানুষই কেবল অন্যের কাছে মিথ্যা বলে বাহাদুরি করে বেড়ায়। নিজের প্রশংসা জোটে না বলে নিজেই নিজের অহমিকায় মেতে ওঠে। আত্মপ্রচারে মেতে থাকাই তাদের বৈশিষ্ট্য। নিজে যা নয় তা বাড়িয়ে বলা মিথ্যার নামান্তর। জনসমক্ষে তার প্রচারিতব্য বড় বড় মিথ্যা বুলির জন্য সে সমাদৃত না হয়ে বরং ধিকৃত ও নিন্দিত হয়। তাকে একটা শূন্য কলসের সাথে তুলনা করা চলে। কথায় বলে শূন্য কলস বাজে বেশি। পক্ষান্তরে, আত্মপ্রচারবিমুখ গুণী ব্যক্তি সমাজে খাঁটিহীরার মতাে জ্বলজ্বল করে জ্বলে। তার আলােকে সকলে আলােকিত হয়, তার সৌরভে সুরভিত হয় চারদিক। তাঁকে সকলেইশ্রদ্ধা ও সম্মান করে। তিনি কখনাে নিজের গুণকীর্তনে বিভাের থাকেন না; বরং নিজেকে অতি ক্ষুদ্র বলে মনে করেন।জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস বলতেন, “আমি যে কিছুই জানি না, এই শুধু জানি।” বিজ্ঞানী নিউটন বলতেন, “আমি জ্ঞানসমুদ্রের বালুকাতটে বালুকণা খুঁটছি মাত্র।” আর এজন্যই কবি বলেছেন, “নিজে যারে বড় বলে বড় সেই নয়, লােকে যারেবড় বলে বড় সেই হয়।” অতএব, যারা নিজের গুণকীর্তন করে বেড়ায় বুঝতে হবে তারা প্রকৃত গুণী নয়; তারা হচ্ছে আত্মপ্রচারক, শঠ। তাদের মধ্যে কোনাে শ্রেষ্ঠত্ব নেই।

মন্তব্য : মহৎ ব্যক্তির প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে, সবাই তাদের শ্রদ্ধা ও ভক্তি করে। পক্ষান্তরে,অকর্মণ্যলােকেরাই ব্যর্থ আত্ম-অহমিকা প্রচারে লিপ্ত হয়।

বিকল্প ১

ভাবসম্প্রসারণ: যা প্রকৃত, আসল বা খাটি পরিমাণ ও পরিধিতে তা সব সময় বড় নাও হতে পারে। আপন স্বরূপেই তা ভাস্বরথাকে। কিন্তু যা আসল নয় তাকে আসল হিসেবে প্রচার করতে হলে তার বাহ্যিক রূপ, আকার ও আকৃতিতে বড় ও আকর্ষণীয় করে তুলতে হয়। তেমনি যে ব্যক্তি নিজেই নিজের আত্মপ্রচার করে তার অন্তঃসারশূন্য রূপটি এতে ফুটে ওঠে। জ্ঞানী-গুণী মানুষ নিজের গুণেই আলােকিত হয়। এর জন্যে নিজের গুণ, ক্ষমতা আত্মপ্রচারের প্রয়ােজন হয় না ।

আমাদের সমাজে এমন মানুষ আছে যারা নিজের হীনতা গােপন করার জন্যে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। এরা নকল হীরার মতাে।এ ধরনের মানুষ নিজের গৌরব ও আত্মপ্রচার নিজেই করে। কিন্তু জ্ঞানী-গুণী মনীষীরা কখনাে নিজেকে বড় বলে জাহিরকরেন না এবং বড়াই করেন না। নিজেদের গুণের মাধ্যমেই তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ফুল যেমন নিঃস্বার্থভাবে সকলের তরেনিজেকে উৎসর্গ করে, তেমনি গুণী মানুষও। এঁরা কখনাে নিজের স্বীকৃতির জন্যে কারাে মুখাপেক্ষী নয়। তবে যারা আত্মপ্রচারচায়, শ্রমবিমুখ ও গুণের অধিকারী নয় তারাই কেবল নিজেই নিজের গুণকীর্তন করে নিজেকে বড় বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।গুণী ব্যক্তি আসল হীরার মতাে। নিজের গুণেই নিজে উজ্জ্বল, জ্বলজ্বলে । এঁদের থাকে না কোনাে অহংকার। অন্যকে ছােট করেনিজেকে বড় বলে প্রমাণ করার কোনাে অপপ্রচার এঁরা করেন না।

যে মানুষ প্রকৃত অর্থে গুণী, মহৎ তার স্বরূপ বােঝার জন্যে কোনাে প্রমাণের প্রয়ােজন হয় না। তিনি নিজেই নিজের গুণ ও কর্মদ্বারা সকলের হৃদয়ে স্থান করে নেন। এ ধরনের মানুষকে চেনার জন্যে আসল-নকল দরকার হয় না। এরা সত্যিকার হীরারমতােই মূল্যবান। গুণের জ্যোতি দিয়ে এঁরা সকলকে আকৃষ্ট করেন।

বিকল্প ২

মূলভাব : সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ আছে, যারা নিজেকে ভাল মানুষ বলে জাহির করলেও লোকের কাছে এরা ঘৃণারই পাত্র।

সম্প্রসারিত ভাব : নিজের আসল পরিচয় গোপন রেখে যদি নিজেকে বড় বলে অহংকার করা হয় তাহলে তার অন্তসারশূণ্যতা সহজেই ধরা পড়ে। মিথ্যা বাহদুরী জীবনকে বড় করে না, বরং আসল পরিচয় বের করে নিজের দীনতাকে সহজে ব্যক্ত করে দেয়।

নকল হীরা নিজেকে বড় বলে প্রচার করার চেষ্টা করে। তার এ অহংকারবোধ থেকে তার আসল পরিচয় বড় হয়ে ওঠে। সে নিজে নকল বলে বড়র বড়াই করে। সে যদি আসল হীরা হত তবে তার অহংকার করার প্রয়োজন হত না। সে যে বড় তা তার নম্রতা থেকে প্রকাশ পেত। নিজের হীনতা গোপন করার জন্য সে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে। পরিণামে তা স্বরূপ প্রকাশ পেয়ে যায়। মানুষের মধ্যেও এ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। নিজের দুর্বলতা গোপন রাখার জন্য অনেকে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। কিন্তু মিথ্যা দিয়ে সত্য গোপন করা যায় না। সত্যের স্বরূপ এক সময় প্রকাশিত হয়ে পড়ে। আর যে ব্যক্তি মহৎ সে তার চরিত্রে সংযমী হয় এবং অহংকারের আশ্রয় গ্রহণ করে না। তার মহত্ত্ব তার কাজের মাধ্যমে ফুটে ওঠে। কিন্তু হীনপ্রাণ ব্যক্তিরা নিজের নীচ পরিচয় গোপন রাখার জন্য অনাবশ্যক বাহদুরী করে। আর এ বাহদুরীই তার স্বরূপ প্রকাশ করে দেয়।

যারা সত্যিকারের ভাল মানুষ তারা কখনো অন্যায়ের সাথে আপোস করে না। এবং মিথ্যাকে প্রতিহত করে। অর্থাৎ ভাল মানুষ কখনও মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে না।

আরো পড়ুন: কে লইবে মাের কার্য

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment