কালাে আর ধলাে বাহিরে কেবল ভিতরে সবারই সমান রাঙা – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “কালাে আর ধলাে বাহিরে কেবল ভিতরে সবারই সমান রাঙা ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

কালাে আর ধলাে বাহিরে কেবল ভিতরে সবারই সমান রাঙা - ভাবসম্প্রসারণ

কালাে আর ধলাে বাহিরে কেবল ভিতরে সবারই সমান রাঙা ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : পৃথিবীর শুরু থেকে মানুষের মধ্যে জাতি-ধর্ম এবং বর্ণ-গোত্রের পার্থক্য বিদ্যমান। এ পার্থক্যকে কেন্দ্র করেই বিরাজ করছে মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কারণ, বাইরে বর্ণের পার্থক্য থাকলেও সবার শরীরেই একই লাল রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে।

সম্প্রসারিত-ভাব : সমগ্র পৃথিবীর মানুষ এক মানব জাতির সদস্য। তাদের প্রত্যেকের ধমনিতেই বইছে একই লাল রক্ত। কিন্তু মানুষ এ সত্যটি উপেক্ষা করে হিংসা-বিদ্বেষে লিপ্ত। সারা পৃথিবী জুড়ে আজ চলছে অস্থিরতা। জাতিতে-জাতিতে বিদ্বেষ, ধর্মে-ধর্মে সংঘাত। বর্ণ-গোত্রের বাছ-বিচার এখনো পরস্পরকে দূরে সরিয়ে রাখছে। সৃষ্টির শেষ্ঠ জীব মানুষ নিজের অস্তিত্ব ভুলে লিপ্ত হচ্ছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত আর যুদ্ধ-বিগ্রহে। আমরা সবাই এক আদমের সন্তান। অথচ আমাদের মাঝে আজ কতইনা বিভক্তি। সাদা চামড়াওয়ালারা ঘৃণা করছে কালো আদমীদের। ধনী এবং অভিজাত শ্রেণীর মানুষেরা ঘৃণা বর্ষণ করছে বিত্তহীন মানুষদের প্রতি। ধর্মীয় উন্মাদনায় আক্রান্ত হয়ে এক মানুষ অবলীলায় কেড়ে নিচ্ছে আরেক মানুষের প্রাণ। সাম্রাজ্যবাদী রাজশক্তি নিজের ক্ষমতা বাড়াতে ব্যবহার করছে আধুনিক মারণাস্ত্র। শোষিত, বঞ্চিত মানুষের রোনাজারিতে ভারি হচ্ছে পৃথিবীর আকাশ-বাতাস। একদিকে দারিদ্রপীড়িত মানুষ ভাগ্যকে সম্বল করে অনাহারে অর্ধহারে বেঁচে আছে। অন্যদিকে ঐশ্বর্যশালীরা তাদের বিত্ত ও বৈভবের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে দিনকে দিন। মানবতা আজ ধূলায় লুণ্ঠিত। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। সম্পদের সুষম বণ্টনের অভাবে পৃথিবীর এক অংশের মানুষ ক্ষুধা, দারিদ্র আর অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। আরেক অংশের মানুষ সম্পদের মালিক একবারও ভাবছে না এসব নিগ্রহীত মানুষেরা তাদের মতোই রক্তমাংসের মানুষ। ধনী-দরিদ্র, জাতি-ধর্ম, বর্ণ-গোত্র এবং উচ্চ-নিচ -এর ভেদাভেদ ভুলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যদি একে অপরকে আপন ভাবতো তাহলে এ পৃথিবীই স্বর্গ হয়ে উঠত। সুষম বণ্টন এবং সম অধিকার যদি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে আমাদের এ পৃথিবী ফুলের মেলা হয়ে উঠবে।

সমস্ত পৃথিবী জুড়ে মানুষে মানুষে যে ভেদাভেদ তা দূর হওয়া উচিত। সকল ধরনের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একে অপরকে কাছে টেনে নিতে হবে। এ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ চায় তার বেঁচে থাকার অধিকার এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বিকল্প ১

মূলভাব: নানান কারণে এ পৃথিবীতে মানুষে মানুষে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। এ পার্থক্যকে কেন্দ্র করেই বিরাজ করে বিদ্বেষ। অথচ বাইরে এত পার্থক্য থাকলেও সবার শরীরেই প্রবাহিত হয় একই লাল রক্ত।

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীর সব মানুষই সৃষ্টির দিক থেকে এক ও অভিন্ন। সারা পৃথিবীর মানুষ এক মানবজাতির সদস্য, সবাই সৃষ্টির সেরা। প্রত্যেকের ধমনিতেই বইছে একই লাল রক্ত। কিন্তু এ সত্যটি উপেক্ষা করে কেউ কেউ নিজেদেরকে অভিজাত ভাবে। ফলে সারা পৃথিবীজুড়ে আজ চলছে জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, ধর্মে-ধর্মে সংঘাত, বর্ণ-গােত্রের বাছবিচার, যেগুলাে মানুষকে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এক আদম-হাওয়ার সন্তান আমরা সবাই। অথচ আমাদের মাঝে আজ কত বিভক্তি। শ্বেত বর্ণধারীরা ঘৃণা করে কালাে বর্ণধারীদের। ধনী এবং অভিজাত শ্রেণির মানুষেরা ঘৃণা করে বিত্তহীন মানুষদের। প্রতিহিংসার উন্মাদনায় আক্রান্ত হয়ে এক মানুষ অবলীলায় কেড়ে নিচ্ছে আরেক মানুষের প্রাণ। সাম্রাজ্যবাদী রাজশক্তি নিজের ক্ষমতা বাড়াতে ব্যবহার করছে আধুনিক মারণাস্ত্র। শােষিত, বঞ্চিত মানুষের আহাজারিতে ভারী হচ্ছে আকাশ-বাতাস। একদিকে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষ ভাগ্যকে সম্বল করে অনাহারে বেঁচে আছে; অন্যদিকে সম্পদশালীরা দিনদিন তাদের বিত্ত-বৈভবের পরিমাণ বাড়িয়ে চলেছে। সম্পদের সুষম বণ্টনের অভাবে পৃথিবীর এক অংশের মানুষ ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর অপুষ্টির শিকার, আরেক অংশের মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ে সাধারণ মানুষকে শােষণ করে চলেছে। অসহায় মানুষদের কথা তারা চিন্তা করে না। তারা একবারও ভাবে না নিগৃহীত মানুষেরা তাদের মতােই রক্ত-মাংসের মানুষ। সবার দেহে একই বর্ণের রক্তধারা, শারীরিক গঠন কাঠামােও একই ধরনের। বাইরে আমাদের মধ্যে নানা ব্যবধান রচিত হলেও আমরা একই উৎস থেকে সৃষ্টি।

মন্তব্য: সবচেয়ে বড় কথা হলাে পৃথিবীর সকল মানুষের বড়াে পরিচয় সবাই মানুষ। সকলের দেহে একই লাল রক্ত বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং মানুষে মানুষে বৈষম্য করা একেবারেই অনুচিত।

আরো পড়ুন: কাঁটা বনের গােলাপই সত্যিকারের গােলাপ

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment