তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন? – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন? ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন? - ভাবসম্প্রসারণ

তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন? ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : অন্যের খারাপটুকু উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।

সম্প্রসারিত ভাব : পৃথিবীতে ভাল ও মন্দ দুই-ই আছে। মন্দের আধিক্য বেশী বলে মন্দকেই আঁকড়ে ধরতে হবে এমন কথা নেই। মন্দ লোকেরা নিজের স্বার্থের জন্য যেকোন অপকর্ম অবলীলায় করতে পারে। এবং তারা নিশ্চিতমনে অপরের সর্বনাশ করে থাকে। মন্দ লোকের কোন আদর্শ নেই। তারা হীনমনা। তাদের নীচ কাজের প্রত্যুত্তরে আর একটি নীচকাজে অংশ নেওয়া কোন মহৎ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। একজন নীচ ব্যক্তি যদি কোন খারাপ কাজ করে বা কোন লোকের খারাপ তাই খারাপ কাজে তার অরুচি নেই। কোন মহৎ লোক কোন ক্রমেই খারাপ লোকের কু-কর্মের উত্তর দিতে দিয়ে খারাপ কাজে অংশ নেবেন না। অধম ব্যক্তিরা অমঙ্গল করে। তাই বলে উত্তম ব্যক্তি সে পথ ধরে চলে না। উত্তম হতে হলে হিংসার পথ, অন্যায়ের পথ ত্যাগ করতে হয়। কুকুর অধম প্রাণী। সে পায়ে কামড়ায়। তাই বলে মানুষ কখনো কুকুরের পায়ে কামড়ায় না। অধম যে সে ক্ষতি করতে পারে। তার ক্ষতি করা প্রবৃত্তিজাত। মহৎ ব্যক্তি কখনো ক্ষতিকর কাজে অংশ নেন না। কোন ব্যক্তি দুর্ব্যবহার করলে প্রত্যুত্তরে তার প্রতি দুর্ব্যবহার করা মহত্ত্বের লক্ষণ নয়। তার ব্যবহারের উত্তরে উত্তম মানবিক আচরণই কাম্য। অর্থাৎ, ক্ষমা, বিনয়, সহ্যগুণ ও ভালোবাসাই হচ্ছে চরিত্র গঠনের আদর্শ।

বিকল্প ১

মূলভাব:মানুষের উচিত নিজেকে যথার্থ ভালাে মানুষ হিসেবে গড়ে তােলা। অপরের অন্যায় আচরণকে নিজের আদর্শ হিসেবে বিবেচনা না করা।

সম্প্রসারিত ভাব: নিজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মনুষ্যত্বের গুণের বিকাশ ঘটানােই মানব জীবনে কর্তব্য হওয়া দরকার। নিজেকে বড় ও মহৎ করে সে আদর্শ প্রদর্শন করাই উত্তম মানুষের কাজ। সংসারে ভালােমন্দ মানুষের অভাব নেই। জীবনে প্রতিনিয়ত ভালাে আর মন্দ দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে মানুষ। কিন্তু মহৎ গুণাবলী সহযােগে যথার্থ মনুষ্যত্বের অধিকারী হতে পারলেই জীবনের সার্থকতা ফুটে ওঠে। তাই চারদিকের অন্যায় অনাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে মানবিক গুণে সমৃদ্ধ করতে হবে জীবনকে। এর জন্য দরকার মহৎ আদর্শ অনুসরণ এবং মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন। অপরের মন্দ কর্ম কখনো আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। অপরের খারাপ কাজ দিয়ে প্রভাবিত হওয়াও যথার্থ নয়। চারদিকের পরিবেশ যদি বিরূপ থাকে তাহলে তা থেকে নিজেকে সাবধানে সরিয়ে নিতে হবে এবং শ্রেষ্ঠ মানবিক আদর্শে জীবন গঠন করতে হবে। অধম ব্যক্তি কখনাে কারাে আদর্শ হতে পারে না। একজন অধম হলে সঙ্গে সঙ্গে তার অনুকরণে নিজেও অধম হতে হবে এমন নয়। বরং নিজের জীবনে মহৎ গুনাবলীর বিকাশ ঘটাতে হবে এবং মানবিক গুণসম্পন্ন চরিত্রের আলােকে অপরের জীবনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে হবে। অধমকে প্রভাবিত করে উত্তমের পর্যায়ে আনতে হবে। সংসারে নিজের জীবনকে আদর্শ করার মতাে সুন্দর গুণের চর্চা করতে হবে এবং মহৎ চরিত্র গড়ে তুলে তা সকলের আদর্শ করতে হবে। এই শ্রেষ্ঠত্বের মধ্যেই জীবনের সার্থকতা নিহিত।

মন্তব্য: উত্তম আদর্শের পথে চলাই জীবনের সার্থকতা নিহিত।

বিকল্প ২

অন্যের অন্যায়, অমানবিক ও অশুভ আচরণ কখনও মানুষের অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ হতে পারে না। কলুষময় পরিবেশের মধ্যে থাকলেও প্রকৃত মানুষের সাধনা হওয়া উচিত সত্য, ন্যায় ও মানবিকতার আদর্শে জীবন গঠন। মনুষ্যত্বের এই সাধনায়ই মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারে। পরের সুকৃতিতে অনুপ্রাণিত হওয়া প্রশংসনীয় কিন্তু পরের স্বার্থপরতায় প্রভাবিত হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত।

চরিত্র-বৈশিষ্ট্য ও মানসিকতার বিচারে সংসারে সব মানুষ অভিন্ন চরিত্রের হয় না, মানুষের মধ্যে ভালোও আছে মন্দও আছে। সৎও আছে, অসৎও আছে। এদের মধ্যে উত্তম মানুষই হল সমাজের আদর্শ। এঁরা চিন্তা ও কর্মে সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী, এদের জীবন-যাপন সহজ-সরল-অনাড়ম্বর। অন্যায় পথে অর্থবিত্ত অর্জনের সব ধরনের মোহ থেকে এঁরা মুক্ত। নিজের সাধ্য ও সামর্থ্য মতো এঁরা অন্যের কল্যাণের চেষ্টায় সচেষ্ট থাকেন। পক্ষান্তরে যারা অধম তারা স্বার্থান্বেয়ী, অর্থলোলুপ। সমাজের মঙ্গলের চেয়ে ছলে-বলে-কৌশলে অন্যেয় পন্থায় নিজের স্বার্থ হাসিলই এদের একমাত্র লক্ষ্য। স্বভাব বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এরা নীচ ও খল প্রকৃতির। অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ ও বিত্তের দম্ভে এরা ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। অন্যকে শোষণ ও লুণ্ঠন করে সম্পদ বৃদ্ধিতে এদের আনন্দ। অন্যকে অত্যাচার করে এরা পায় বিকৃত পরিতৃপ্তি। ঈর্ষা, হিংসা, জিঘাংসা এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। অর্থ-বিত্ত ও ক্ষমতার জোরে এরা সমাজে হয়তো সাময়িক দাপটে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে এরা নিন্দিত হন। ইতিহাস এদের মনে রাখে না। যদি রাখে তবে তা এদের ঘৃণিত ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যে, যেন অন্যেরা এদের পথ অনুসরণ না করেন। এসব নীচ ও অদম লোকের পশু স্বভাব কখনো মানুষের অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারে না। এদের পথ সর্বদাই পরিত্যাজ্য। এদের সঙ্গে সম্পর্কও পরিহার্য। বস্তুত অধম না হয়ে উত্তম হওয়াই সমুষ্যত্বের সাধনা। উত্তম আদর্শই মানব জীবনে আদর্শ। অধমের কার্যকলাপের বিপরীতে উত্তম কার্যকলাপের আদর্শ স্থাপনই মনুষ্যত্বের লক্ষণ। সেই জন্যেই ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ লিখেছেন :

“কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়,
তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে মানুষের শোভা পায়?”

প্রকৃত মানুষ হতে হলে অন্যের কদর্য ব্যবহারে প্রভাবিত হলে চলবে না। মহৎ অভিপ্রায় সফল করে তুলতে হলে এই সহষ্ণিুতা অপরিহার্য।

বিকল্প ৩

সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ তার স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চলে। এজন্য সে মানবতার কল্যাণে কাজ করে, পাশাপাশি যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে। সমাজে মানুষ তার কর্মের কারণে দুই ভাগে বিভক্ত। উত্তম এবং অধম। উত্তম সর্বদাই মানব কল্যাণে নিয়োজিত। যাবতীয় ভালো এবং জনহিতকর কাজ সে সম্পাদন করে থাকে। অপরদিকে অধম কখনোই মানবকল্যাণে নিয়োজিত হয় না। মানবধর্ম ভুলে সে আপন কাজে ব্যস্ত হয়। সমাজ-সংসার তাদের কাছ থেকে কিছুই পায় না। কোনো সমাজেই সে অনুকরণীয় হতে পারে না। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আমাদের রয়েছে বিবেকবোধ, চিন্তার ক্ষমতা এবং ভাল-মন্দ নির্ণয়ের ক্ষমতা। যে তার স্বাভাবিক জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে ভাল-মন্দের বিচার না করে খারাপ কাজে লিপ্ত হয় সে সমাজে অধম হিসেবে বিবেচিত হয়। উত্তম স্বভাবের মানুষ সমাজের অন্য মানুষদের উত্তম হওয়ার প্রেরণা যোগায়। দুনিয়ার সর্বত্রই উত্তম মানুষগণ শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার সাথে স্মরণীয়। অন্যদিকে অধম কোনো সমাজেই সমাদৃত নয়। একজন মানুষ তার জ্ঞান, বুদ্ধি, চিন্তাশীল মনের প্রখরতা দিয়ে সমাজে নিজের অবস্থান সৃষ্টি করে। অধম সব সময়ই অকল্যাণকর কাজে রত। উত্তম এবং অধমের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয় তাদের কাজ, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। আর সেজন্যই উত্তম সর্বদা অধমের চেয়ে আলাদা। সে কখনোই অন্যের সাথে নিজের তুলনা করে না। উত্তম তাই অধম থেকে নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে এবং সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। মূলত ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকলে মানুষ শত অধমের সঙ্গে থেকেও ভালো মানুষ তথা উত্তম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

শিক্ষা: উত্তম স্বভাবের মানুষই সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। তাই উত্তম হওয়ার সাধনাই হওয়া উচিত মানবজীবনের প্রকৃত সাধনা, প্রধান লক্ষ্য।

বিকল্প ৪

মূলভাব : কোনাে মানুষের মহৎ উদার ও চরিত্রবান হওয়া অন্যের ভালাে বা মন্দ হওয়ার ওপর নির্ভর করে না। উত্তম স্বভাবের মানুষ কখনাে অধম ও হীন স্বভাবের মানুষের ন্যায় আচরণ করেন না।

সম্প্রসারিত ভাব : সমাজের সব মানুষ এক রকমের হয় না। কেউ ভালাে, কেউ মন্দ। কিছু মানুষ আছে যারা সমাজ ও মানুষের কল্যাণে। কাজ করে অন্যায়-অপকর্ম এবং অন্যের ক্ষতিসাধন করা থেকে বিরত থাকে। এ শ্রেণির মানুষ সমাজে উত্তম মানুষ হিসেবে গণ্য। আবার মানুষের মধ্যে যেমন রয়েছে সুপ্রবৃত্তি বা বিবেক-বুদ্ধি ও ঔচিত্যবােধের তাড়না তেমনি রয়েছে কুপ্রবৃত্তির প্ররােচনা। আর আছে ব্যক্তিস্বার্থের আকর্ষণ। এসব কারণে মানুষ পারস্পরিক স্নেহ-প্রীতি ও প্রেম ভালােবাসার কথা ভুলে গিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ, লােভ-লালসা এবং নানা অন্যায় অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এ শ্রেণির মানুষ সমাজে অধম মানুষ হিসেবে পরিগণিত। সমাজে এদের প্রভাবও কম নয়। অনেকেই এ শ্রেণির লােকদের অনুকরণ-অনুসরণ করে থাকে। কারণ তাদের ধারণা যে, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অসৎ। তাই তাদের সৎ হওয়ার চেষ্টা করা একেবারেই অর্থহীন। কিন্তু এ ধরনের ভাবনা একেবারেই অর্থহীন ও বােকামিপূর্ণ। কারণ মানুষ হিসেবে আমাদের ভালাে-মন্দ, কল্যাণ- অকল্যাণ, ন্যায়-অন্যায় ও উচিত-অনুচিতের পার্থক্য উপলব্ধি করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই আমাদের ভালােটাকেই গ্রহণ করতে হবে এবং মন্দটাকে বর্জন করতে হবে। অর্থাৎ অন্যরা অধম বলে আমাদেরও অধম হলে চলবে না। বিবেকের তাড়নায় তাড়িত হয়ে আমাদের উত্তম হওয়ার সাধনা করতে হবে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, সমাজে অধম লােকের কোনাে স্থান নেই। সমাজ তাদের নিন্দা ও অবহেলার চোখে দেখে। অন্যদিকে, উত্তম লােক মানুষের শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালােবাসার পাত্র। এছাড়া সমাজে উত্তম মানুষরূপে বেঁচে থাকার মধ্যে একটা গৌরব ও আত্মতৃপ্তি রয়েছে।

মন্তব্য : মন্দ স্বভাবের মানুষ ব্যক্তির ও সমাজের অনিষ্ট চিন্তায় বিভাের থাকে। কিন্তু উত্তম স্বভাবের ব্যক্তির পক্ষে অনুরূপ আচরণ এবং চিন্তার প্রকাশ অপ্রার্থিত ও অনুচিত।

আরো পড়ুন: তেলা মাথায় তেল দেয়া মনুষ্য জাতির রােগ

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment