ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ/মনুষ্যত্বের বিকাশ – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ/মনুষ্যত্বের বিকাশ ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ/মনুষ্যত্বের বিকাশ - ভাবসম্প্রসারণ

ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ/মনুষ্যত্বের বিকাশ ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : ত্যাগই মানবজীবনের মহৎ আদর্শ । ভোগের সাময়িক সুখানুভূতি ত্যাগের আনন্দের সাথে তুলনীয় নয় । ত্যাগের মধ্যদিয়েই মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধিত হয় ।

সম্প্রসারিত ভাব : ভোগ নিজের জন্য , ত্যাগ পরের জন্য । ভোগ ও ত্যাগের মধ্যদিয়ে মানুষের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশিত হয় । ভোগ মানুষকে তাৎক্ষণিক সুখ দিলেও পরিণামে স্থায়ী দুঃখ – যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায় । অন্যদিকে ত্যাগী মানুষেরা সাময়িক দুঃখ – যন্ত্রণা ভোগ করলেও পরিণামে তাঁরা স্থায়ী সুখ – শান্তিতে কাল কাটিয়ে থাকেন । অপর মানুষের হিতার্থে যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেন তিনিই মহৎ । মৃত্যুর পরেও তিনি প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকেন । কবির ভাষায়-

“ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ,
ক্ষয় নাই , তার ক্ষয় নাই । ”

সংসারে এক শ্রেণির মানুষ আছে যারা সুখের জন্য লালায়িত । প্রাচুর্যের ও ভোগের মধ্যদিয়ে তারা সুখকে করায়ত্ত করতে সদা সচেষ্ট । ভোগের চাহিদা অসীম । ফলে ভোগী মানুষেরা প্রকৃত সুখও খুঁজে পায় না । অন্যদিকে কল্যাণের জন্য যে স্বার্থ ত্যাগ করে তার মধ্যেই আছে প্রকৃত মানসিক প্রশাস্তি । ভোগী মানুষ কেবল নিজের জন্যই বাঁচে কিন্তু ত্যাগী মানুষ তাঁর মৃত্যুর পরেও হাজার হৃদয়ে জীবন্ত হয়ে থাকেন । এভাবেই মহৎ মানুষেরা তাদের ত্যাগের মধ্যদিয়ে প্রকৃত সুখের সন্ধান লাভ করেন । অন্যদিকে ভোগের মাধ্যমে যারা সুখ খোঁজে প্রকারান্তরে তারা সুখকেই বিসর্জন দেয় । সুখের অন্বেষণে তারা ভোগের মাত্রা বাড়াতে থাকে আর এভাবে সুখের কাছ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে । তাই ত্যাগী মানুষই প্রকৃত সুখী ।

মন্তব্য : আমাদের জীবনকে ত্যাগ সাধনার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে । ভোগবাদী প্রবণতা পরিত্যাগ করতে হবে ।

বিকল্প ১

ভাব-সম্প্রসারণ: ত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রকৃত মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। ভােগের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় ব্যক্তির লােভ-লালসা। তাই ভােগ নয়, ত্যাগের চর্চাই মানুষের সুন্দর গুণাবলিকে উৎকর্ষ দান করে।ভােগ ও ত্যাগ দুটি বিপরীত বিষয়। মানুষ ইন্দ্রিয় সুখের আশায় ভােগে মত্ত হয়; অন্যদিকে মানসিক তৃপ্তির আশায় ত্যাগ স্বীকার করে। ভােগ সাময়িক সুখ আনতে পারে। তবে যিনি ত্যাগে কুণ্ঠিত হন না, তিনি অনাবিল আনন্দ উপভােগ করতে পারেন। ভােগের নিমিত্তে মানুষ জড়িয়ে যায় পঙ্কিলতায় – হিংসা, ঘৃণা, স্বার্থপরতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে আপন করে নেয়। ভােগবাদী মানুষ তাদের সম্পদ কখনাে পরার্থে ব্যয় করে না, পরের দুঃখে কাতর হয় না; বরং হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সুযােগের সন্ধান করে। মানবিকতা ও পরার্থপরতা তাদের কাছে অর্থহীন। তাই সমাজের মানুষের কাছেও তাদের কোনাে মর্যাদা থাকে না। তারা জন্মগতভাবে মানুষ হলেও তাদের মনুষ্যত্ব আসলে বিকশিত হয় না। আবার কিছু মানুষ ভােগের চেয়ে ত্যাগকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। মানুষের বিপদে তারা ছুটে যান, নিজের সুবিধার কথা না ভেবে বৃহত্তর কল্যাণের কথা ভাবেন, দুঃখীজনের দুঃখ দূর করতে নিজের সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে আনন্দ পান। ভােগবাদী মানুষের ভ্রান্ত ধারণা – ভােগের মধ্যেই সকল সুখ। তাই তারা সম্পদের পাহাড় গড়ে বিলাস-ব্যসনে মগ্ন হয়। তারা ভােগের মাধ্যমে সুখী হতে চায় বটে, তবে তারা প্রকৃত সুখের সন্ধান পায় না। বরং যেসব মানুষ নির্দ্বিধায় অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকেন, তাঁদের দ্বারা সমাজ যেমন উপকৃত হয়, তারা নিজেরাও এসব কাজের মধ্য দিয়ে অনাবিল আনন্দ লাভ করেন। ত্যাগের মহীমা অসীম। মনুষ্যত্ব বিকাশে ত্যাগের চর্চার কোনাে বিকল্প নেই। ভােগ মনুষ্যত্বকে লজ্জা ও হীনতায় ডুবিয়ে রাখে।

বিকল্প ২

মূলভাব : ভােগ বিলাসিতায় প্রকৃত সুখ পাওয়া যায় না। প্রকৃত সুখ আসে আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে।

সম্প্রসারিত ভাব : ভােগ ও ত্যাগ মানবের আত্মাবনতি ও আত্মমুক্তির রক্তাক্ত দলিল। ভােগাকাঙক্ষা মানবের সীমাহীন দুঃখের কারণ। ত্যাগ মানুষকে রিক্ত করে না; বরং পূর্ণতাই এনে দেয়। অপরের হিতার্থে যিনি নিজের জীবন অকাতরেবিলিয়ে দেন, মৃত্যুর পরে তিনি আরও বড় মানুষ হিসেবে অমর হয়ে থাকেন। কবির কথায়—

“নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান,
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।”

আমরা যখন ভােগের জীবনযাপন করি তখন শুধু নিজের জন্য বাঁচি। এ বাঁচা মৃত্যুর সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায়। যখন ত্যাগের জীবনযাপন করি, তখন পরের জন্যও বাচি। জীবনে ত্যাগ থাকলে জীবন অর্থবহ হয়। ত্যাগের মনােভাব মানুষকে মহৎ করে তােলে, অন্তরকে অপার আনন্দে পূর্ণ করে দেয়। অসহায়, বিপন্ন ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে তাদের পাশে পঁড়াতে পারলে অন্তরে অনির্বচনীয় শান্তি ও সুখের ফল্গুধারা বয়ে যায়। তাই ত্যাগ আমাদের চরিত্রের সর্বোচ্চ আদর্শ হওয়া উচিত। ত্যাগের মাধ্যমে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে। ত্যাগ মহাশক্তি। অপরদিকে, ভােগ হচ্ছে লক্ষ ফণা সাপ। তাকে পদদলিত করা আমাদের কর্তব্য। ভােগাকাঙক্ষার নিবৃত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা সার্থক মানুষ হিসেবে। নিজেদের পরিচয় দিতে পারব না। যে ত্যাগ করতে জানেভােগর অধিকার তারই জন্মে।

মন্তব্য : নিঃস্বার্থভাবে অপরের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়ার মাঝেই জীবনে আসে চরম সার্থকতা। তাই ভােগকে
পরিহার করে ত্যাগকে স্বাগত জানানাে উচিত।

বিকল্প ৩

মূলভাব: মনুষ্যত্বই মানুষের পরিচায়ক। আর ত্যাগের মহিমাই পারে মানুষের এ মনুষ্যত্বের উৎকর্ষ ও বিকাশ ঘটাতে। 

সম্প্রসারিত ভাব: জগৎ সংসারে ভোগ ও ত্যাগ দুটি বিপরীতমূখী দিক। ভোগ ও ত্যাগের দরজা সবার জন্যই উন্মুক্ত। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলার করাণ হচ্ছে তার মনুষ্যত্ব। মনুষ্যত্বের কল্যাণেই মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা এবং শ্রেষ্ঠ। মানুষ জন্মগতভাবেই মনুষ্যত্ব লাভ করে। তবে মানুষকে তার স্বীয় চেষ্টায় এ মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘাটাতে হয়। মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোর মধ্যেই মানব জীবনের সার্থকতা নিহিত । ভোগের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না । ভোগ মানুষকে জড়িয়ে ফেলে পঙ্কিলতা, গ্লানি ও কালিমার সাথে। এটি শারীরিক বৃদ্ধি ঘটাতে পারে কিন্তু মানসিক উৎর্কষ তথা মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে পারে না। পক্ষান্তরে , ত্যাগের দ্বারাই মনুষ্যত্ব বিকশিত ও উৎকর্ষিত হয়। ত্যাগ মানুষকে নিয়ে যায় মনুষ্যত্বের স্বর্ণ শিখরে। যারা ভোগের মধ্যে নিজেদের ব্যস্তরাখে পৃথিবীতে তাদের কোনো সম্মান নেই। কিন্তু যারা ত্যাগের মহিমার ভাস্বর, মানুষ তাঁদেরকে মৃত্যুর পরেও ভোলে না। অর্থাৎ তাঁরা অমরত্ব লাভ করেন। বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (স.) এর চরিত্র ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ত্যাগের মাধ্যমেই তাঁর পূর্ন মনুষ্যত্ব তথা মানবিক গুনাবলি ফুটে উঠেছে। 

মন্তব্য: ত্যাগেই মানবজীবনের সার্থকতা। তাই ত্যাগই হওয়া উচিত মানুষের প্রধান আদর্শ।

আরো পড়ুন: দশের লাঠি একের বোঝা

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment